নাস্তিকদের সম্পর্কে জনগণের একটি ভুল ধারণা

নাস্তিকদের সম্পর্কে জনগণের একটি ভুল ধারণা রয়েছে, আর সেটি হলো - যেহেতু নাস্তিকদের 'ঈমান' নেই, তাই তাদের কোনো বিবেকও নেই, তারা যা ইচ্ছা তা করতে পারে। আদতে ব্যাপারটা তা নয়; নাস্তিকরাও মানুষ, তারাও সামাজিক জীব। সমাজে ও রাষ্ট্রে অবস্থান করতে হলে অন্য সবার মতো তাদেরকেও কিছু নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। সুতরাং নাস্তিকদের বিবেক নেই - এ কথাটি সত্য নয়।

নাস্তিকরা খুবই ভয়ংকর এবং এদের বুক-পিঠ নেই, অর্থাৎ যেকোনো সময় যে কারো ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে - এটিও ভুল ধারণা। বরং সত্য হলো এই যে, নাস্তিকদের বিবেকের স্ট্যান্ডার্ড সাধারণের তুলনায় অনেক উপরে। সাধারণ মানুষ অর্থাৎ আস্তিকেরা যে লোভটা হয়তো সামলাতে পারবে না, একজন সত্যিকার নাস্তিক সেটাও সামলাতে পারবে। তবে কিছু মানুষ আছে, যারা আস্তিক না নাস্তিক তারা নিজেরাও জানে না। এরা সুবিধাবাদী, অর্থাৎ নিজেকে কখনো আস্তিক, কখনো নাস্তিক পরিচয় দেয়। যেমনঃ নিজের বোনের বিয়ে হবার আগ পর্যন্ত এরা চরমমাত্রায় নামাজি বা ধার্মিক। আর বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়া মাত্রই এরা স্বরূপে ফিরে যায়, অর্থাৎ নিজের স্বার্থের জন্য এরা তখন যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত, লাজ-শরমের মাথা খেয়ে হলেও। 

এ ধরনের লোকই এক্সপেরিমেন্ট বা ফ্যাশন করার জন্য বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিজেদেরকে নাস্তিক পরিচয় দিয়ে আকাম-কুকামে মেতে ওঠে, অর্থাৎ চরম নীতিহীনতার পরিচয় দেয়। এদের কর্মকাণ্ড দেখেই সাধারণ জনগণ নাস্তিকদের প্রতি বিষিয়ে ওঠে। প্রকৃত সত্য হলো এই যে, একজন সত্যিকার নাস্তিক অতি প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে দু'-একটা মিথ্যা বললেও বা ছোটখাট অপরাধ/ত্রুটি করে ফেললেও সে 'চরম নীতিহীনতা'র পরিচয় কখনোই দেবে না। তার কর্মকাণ্ডের মধ্যে সর্বদাই একটা লিমিট থাকবে, যে লিমিট সবার মনে একটা মুগ্ধতা তৈরি করবে। তবে কেবল নাস্তিক পরিচয়ের কারণেই হয়তো লোকজন তাকে কিছুটা বাঁকা চোখে দেখতে পারে। আফটার অল, বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নাস্তিক হওয়া এবং নাস্তিক হয়ে টিকে থাকা সত্যিই কষ্টসাধ্য।

নাস্তিকদের বিবেকের স্ট্যান্ডার্ড কী কারণে সাধারণের উপরে, এবার সেটা ব্যাখ্যা করি। আগেই বলেছি, সত্যিকার নাস্তিক হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়, এটা সাধনার ব্যাপার। কেবল নাস্তিক বলেই অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না বলেই একজন মানুষ ক্রমাগত অপরাধ করে যেতে পারে না। প্রতিটি অপরাধ মানুষকে অনুশোচনায় ফেলে। তবে আস্তিকদের জন্য অপরাধ করা সহজতর। যেমনঃ মুসলিমরা মনে করতে পারে, 'আমি অপরাধ করে যাই, মৃত্যুর আগে তওবা করে নিয়ে ধোয়া তুলসিপাতা হয়ে যাব। তবেই তো বেহেশতে যেতে পারব।' 

তবে নাস্তিকদের জন্য অপরাধ করাটা এত সহজ নয়। নাস্তিকদের চালিকাশক্তি কোনো ধর্মগ্রন্থ বা কিতাব নয়, তাদের চালিকাশক্তি হলো - নিজস্ব বিবেক। আস্তিকেরা যেখানে অন্ধভাবে অনুসরণ করে যায় বিভিন্ন কিতাবকে, লোকজনের কাছ থেকে শোনা কথাকে এবং প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য আস্তিককে, সেখানে একজন সত্যিকার নাস্তিক সর্বদা নিজের বিবেকের চর্চা করে যায়। সে নিজের বিবেককে ক্রমাগত জিজ্ঞেস করতে থাকে, কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক। এটি করতে গিয়ে কখনো কখনো সে জাজমেন্টে ভুল করে ঠিকই, তবে একসময় সৎ ও সঠিক কাজ করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়। তাই একজন  নাস্তিক একজন গড়পড়তা আস্তিকের চেয়ে বেশি বিবেকবান।

Comments

Popular posts from this blog

ওরা আমাদের আত্মীয়

নাস্তিকতা আসলে কী?

নাস্তিকদের শেষকৃত্য